Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সবজি চাষের বিপ্লব ও পুষ্টি স্বয়ংসম্পূর্ণতার বাংলাদেশ

সবজি চাষের বিপ্লব ও পুষ্টি স্বয়ংসম্পূর্ণতার বাংলাদেশ

মোঃ আসাদুল্লাহ১ ড. শামীম আহমেদ২ 

‘পুষ্টি ও সুস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ সবজি চাষ’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে শেষবারের মতো হয়ে যাওয়া জাতীয় সবজি মেলা ২০২০ এর সফলতার ধারাবাহিকতায় সবজি চাষ ও উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ আজ এক সাফল্যের উদাহরণ। অন্যান্য ফসলের তুলনায় বর্তমানে সবজি উৎপাদন কৃষকের জন্য অত্যন্ত সুখকর। কারণ অন্যান্য ফসলের তুলনায় সবজিতে ফলন ও আয় দুটোই বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশে গত ১০ বছরে সবজি উৎপাদন প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে। যার ফলে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে, কৃষকের ও শ্রমিকের আয় বেড়েছে, নারীদের ক্ষমতায়ন হচ্ছে, ভূমিহীনদের কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে এবং কৃষকের অভাব অনেকটাই কমেছে।
আয়তনের দিক দিয়ে ছোট দেশ হলেও বাংলাদেশে সবজি উৎপাদনে বিপুল সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বর্তমানে সবজি উৎপাদনে চীন ও ভারতের পরে বাংলাদেশ তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। যশোর, কুমিল্লা, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, জামালপুর, রংপুর, জয়পুরহাট, নাটোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরসহ কয়েকটি জেলায় সবজি উৎপাদনের বিপ্লব ঘটেছে, যা মাত্র চার দশক আগেও ছিল অনুপস্থিত। এর ফলে শিক্ষিত যুবসমাজ নতুন নতুন প্রযুক্তি ও ইনোভেটিভ ধ্যানধারণা নিয়ে সবজি উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে। পাহাড় ও উপকূলীয় অঞ্চলে সবজি চাষ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় বাড়ির আঙিনা, বাঁধ, ঘেরের পাড়ে এমনকি মাছ চাষের জলাশয়গুলোর ওপর বাউনি দিয়ে লতানো সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে। পাহাড়ে জুম পদ্ধতিতে এবং বসতভিটায় সবজি চাষের ঐতিহ্য রয়েছে। কিন্তু হাওর আঞ্চলে সবজির আবাদের বিপুল সম্ভাবনা এখনো রয়ে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণের অধিদপ্তরের সূত্র মতে এ বছর বাংলাদেশে ৯.৬৫ লাখ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে  উৎপাদন লক্ষমাত্রা ২০০.১৯ লক্ষ মে. টন। শীত,  গ্রীষ্ম, সারা বছর চাষ হয় এবং কিছু বিদেশি জাত মিলে বাংলাদেশে প্রায় ১৪২ ধরনের সবজি চাষ হয়। সবচেয়ে বেশি যে সমস্ত সবজি বাংলাদেশে চাষ হয় তাদের মধ্যে টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, চাল কুমড়া, পটোল, ঝিঙা, করলা, লাউ, চিচিঙ্গা, কাঁকরোল, কাঁচামরিচ, ধুন্দুল, মিষ্টি কুমড়া, ঢেড়স, শসা, ক্ষীরা, মুলা, শিম, গাজর, পুঁইশাক, লালশাক, বরবটি, সজিনা, শিম, ধনে পাতা, মটরশুঁটি, কাঁচা পেঁপে ইত্যাদি।
কৃষি হচ্ছে আমাদের অন্যতম বৃহৎ অর্থনৈতিক খাত, এ খাত থেকে জিডিপির আনুমানিক ১৪ শতাংশ আসে। মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৬৩ শতাংশ এর সঙ্গে জড়িত। মোট সবজির ৩০ শতাংশই উৎপাদন হয় গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে যার পরিমাণ প্রায় ৫০ লাখ টন এবং বাজার মূল্য প্রায় ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
শীতকাল বিভিন্ন শাকসবজি চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এ সময় নানা ধরনের শাকসবজির চাষ হয়। আর এর উৎপাদন অনেক বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির চাষ করা একটু কষ্টসাধ্য। কারণ এ সময়  রোদ, বৃষ্টি, খরা, শিলাবৃষ্টিসহ নানান ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই থাকে। সেজন্য একটু সতর্কতার সাথে এ সময় বিভিন্ন সবজির চাষ করতে হয়। এ সময় গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি, গ্রীষ্মকালীন টমেটো, বরবটি, পটোল, শসা, ঝিঙা, করলা, কাঁকরোল, চিচিঙ্গা, গীমাকলমি, পুঁইশাক, মুখিকচু, মানকচু, মৌলভীকচু, পানিকচু, সজিনা, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া এসবের চাষ করা যায়।
গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি ফাল্গুন-চৈত্র মাস থেকে শুরু করে আশ্বিন মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়। তবে আগাম চাষ করতে পারলে বাজারমূল্য বেশি পাওয়া যায়। শাকসবজি চাষে প্রধান কাজটি হলো জমি নির্বাচন ও জমি তৈরি আলো বাতাস চলাচলের সুবিধা, সেচের সুবিধা, অতি বৃষ্টির সময় জমি থেকে পানি বের করার সুবিধে আছে এরকম উর্বর দো-আঁশ মাটি সবজি চাষের জন্য অত্যন্ত ভালো। শাকসবজি অত্যন্ত নাজুক প্রকৃতির ফসল। সেজন্য একটু যতেœর সাথে এর চাষ করতে হয়। সবজির জমি খুব মিহি ও ঝুরঝুরেভাবে তৈরি করতে হয়। জমি সমতলভাবে তৈরি করতে হয়। এজন্য প্রতিটা চাষের পর পরই ভালোভাবে মই দিলে জমিতে বড় কোনো ঢেলা থাকবে না। বেড় করে শাকসবজি চাষের ব্যবস্থা নিলে সেচ ও পরিচর্যার সুবিধা হয়, আর ফলনও বেশি হয়। জমি তৈরির সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব বা আবর্জনা পচা সার দিতে হবে। জমিতে রসের অভাব থাকলে  সেচ দিয়ে জো এলে তারপর চাষ মই দিয়ে জমি তৈরি করে বীজ বুনতে  হয়। আবার অনেক রকমের সবজি মাদাতে লাগাতে হয় যেমন- শসা, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, কাঁকরোল, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া এসব। এগুলোর প্যাকেটে চারা তৈরি করে নির্দিষ্ট দূরত্বে মাদা তৈরি করে চারা লাগাতে হয়। চারা লাগানোর পর গাছগুলো বড় হতে থাকলে বাউনি বা মাচা তৈরি করে দিতে হয়। মাদাতে চারা লাগানোর আগে পরিমাণমতো সুষম হারে রাসায়নিক সারও দিতে হবে। 
শাকসবজি চাষে সারের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। পরিমাণমতো গোবর, টিএসপি, এমওপি সার শেষ চাষের সময় ভালোভাবে জমিতে মিশিয়ে দিতে হয়। ইউরিয়া সার চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পর প্রথম উপরিপ্রয়োগ করতে হয়। দ্বিতীয় বার উপরিপ্রয়োগ করতে হয় আরও ১৫ দিন পর। লাউ বা কুমড়াজাতীয় অন্যান্য সবজির বেলায় মাদা তৈরি করে প্রতি মাদায় গোবর ১৫ কেজি, সরিষার খেল ৫০০ গ্রাম, ইউরিয়া ২৫০ গ্রাম, টিএপি ২৫০ গ্রাম এবং এমওপি ২৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়। শুধু জৈবসার ব্যবহার করেও ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে জৈবসার সঠিকভাবে তৈরি করতে হবে। গোবর বা কম্পোস্ট জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। শাকসবজি চাষে যে বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো বীজ বপন/চারা রোপণ-আধুনিক জাতের ফসলের ভালো বীজ জমিতে উপযুক্ত জো অবস্থায় বপন করতে হয়। বীজ বপন বা চারা রোপণের কাজ বিকালে করা ভালো।
গাছের গোড়ায় আগাছা হলেই তা সাথে সাথে তুলে পরিষ্কার করে দিতে হবে। রোগ বা পোকার আক্রমণ হলে দমনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বীজ বপনের পর পরই পিঁপড়া বীজ নিয়ে যেতে না পারে সেজন্য সেভিন পাউডার বীজতলার চারদিকে লাইন করে ছিটিয়ে দিতে হয়। ফল জাতীয় সবজি যেমন বেগুন, মিষ্টিকুমড়া  এসব গাছে বা থোকায় অতিরিক্ত ফল থাকলে সেগুলো পুষ্টির অভাবে ঠিকমতো বাড়তে পারে না। এতে ফল আকারে ছোট, বিকৃত ও নিম্নমানের হয়। ফল ছোট থাকেই ফল পাতলাকরণের কাজ সম্পন্ন করলে গাছের ফল ধারণক্ষমতা বাড়ে। ঢলে পড়া ও গোড়াপচা রোগ থেকে চারাকে রক্ষার জন্য আগেই মাটি শোধন করা ভালো। চারা গজানোর পর গোড়াপচা রোগ দেখা দিলে বীজতলায় পানির পরিমাণ কমাতে হবে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন করে অথবা শুকনো বালু বা ছাই ছিটিয়ে দিয়ে আর্দ্রতা অর্থাৎ পানির পরিমাণ কমানো যেতে পারে। একই সাথে ডাইথেন এম-৪৫ অথবা কপার অক্সিক্লোরাইড প্রয়োগ করে রোগের বৃদ্ধি রোধ করা যায়।
বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে দেশের কৃষি উৎপাদকরা সামগ্রিকভাবে চরম সংকটকাল অতিক্রম করছে। কৃষি উৎপাদকেরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যা উৎপাদন করে তা সে গ্রীষ্মকালীন সবজি, ধান, পাট, ডিম, দুধ, মুরগি যাই হোক না কেন, তার কোনটিরই উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছে না। অবশ্য ভোক্তা পর্যায়ে এ সবকিছুরই মূল্য যথেষ্ট বেশি। তার মানে টাকা যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। এ সমস্যা সমাধানে সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণ প্রয়োজন। ইউনিয়ন পরিষদ ভিত্তিক গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন সবজি ক্রয়ের স্থান নির্ধারণ করতে পারে; যেখানে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন সবজি একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর রাখবে; স্কুল, কলেজ ও খেলার মাঠগুলোও আপৎকালীন সময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেখান থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় সবজিসমূহ সরাসরি কিনে ঢাকা ও অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোতে সরবরাহ করা যেতে পারে। এ ছাড়াও স্থানীয় কৃষি অফিস, বিএডিসি ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সমন্বয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারভিশনে উপজেলা অনুযায়ী একটি করে টিম গঠন করে একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে সবজি ক্রয় করে, বড় বড় শহরগুলোতে পাঠানোরে ব্যবস্থা করা  যেতে পারে। বড় বড় সুপারশপগুলোকে সবজি উৎপাদন জেলায় গিয়ে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সবজি কেনার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে। এইখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সহায়তা করতে পারে।
একমাত্র কৃষি খাতের সফলতার উপর আমাদের ১৭ কোটি জনগণের বাঁচামরা নির্ভর করে। আর এই খাতের প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে দেশের প্রায় এক কোটি কৃষক পরিবারসহ ছোটবড় অসংখ্য কৃষি উৎপাদকেরা যারা শুধু  ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য জোগান দিয়ে যাচ্ছে না, বেশ কিছু রপ্তানিযোগ্য পণ্যেরও জোগান দিয়ে যাচ্ছে। কৃষক ও কৃষি সমৃদ্ধিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সব সময় কৃষকের সাথে থাকবে, কৃষকের পাশে থাকবে। য়

লেখক : ১সাবেক মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ২অতিরিক্ত উপপরিচালক (কন্দাল, সবজি ও মসলা জাতীয় ফসল), হর্টিকালচার উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই), খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫, মোবাইল : ০১৭১১১৭৪৩৪৫, ইমেইল:  ashamim.uni@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon